সংবাদচর্চা রিপোর্ট
পরপর তিনবার ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত মহাজোট। ২০০৮, ১৪ আর ২০১৮। তৃতীয় বার জয় পেয়ে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের নেতাকর্মীরা আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজয় করে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি স্তব্ধ প্রায়। ড. কামালকে হোসেনকে নিয়ে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র শেষ স্বপ্ন ভঙ্গ ও ভরাডুবি হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তার সাথে সাথে আগামী দিনের করণীয় নিয়েও ভাবনা শুরু হয়ে গেছে। জেলার ৫টি আসনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছে বিএনপি’র প্রার্থীরা। তার সাথে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে দলের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন কি করবে? এই মুহূর্তে তাদের করণীয় কি?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকটা সক্রিয় হয়ে উঠেছিলো বিএনপির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে ভরাডুবির পর এখন খুব খারাপ অবস্থা বিএনপির। বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারার পর বর্তমানে দিশেহারা অবস্থা বিরাজ করছে দলটিতে।
নির্বাচনে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান মুকুলের মহাজোটের পক্ষে কাজ করার বিষয়টিও ভরাডুবির অন্যতম আরেকটি কারণ। এছাড়াও অভিযোগ আছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে চলছে। মূলত এসব কারনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনী প্রচারে মহাজোটের প্রার্থীরা যখন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, আনন্দ মিছিল করে জনজোয়ার সৃষ্টি করছিলো ঠিক সেই মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিতদের ও অন্যান্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যস্ত। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের সাথে জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউকেই নির্বাচনী প্রচারনায় দেখা যায়নি। তাদের দলীয় কোন্দলের কারনেই নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তার উপর তখন জেলায় সবচেয়ে বেশী আলোচনা ছিলো মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমানের বিপক্ষে এস এম আকরাম, ৪-আসনে শামীম ওসমানের বিপক্ষে মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী ও ১-আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে কাজী মনিরুজ্জামান কে মনোনয়ন দেয়ায় ফুসে উঠেছিলো বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীরা। তবে মহাজোটের পক্ষে কাজ করার বিষয়ে পাল্টি খাওয়া নেতারা বলেন, যারা বিএনপির জন্য জীবনটা শেষ করে ফেলেছে। হামলা-মামলা খেয়ে দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়েছে। তাদেরকে মনোনয়ন না দিয়ে বির্তকিত নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার ফলেই তারা মহাজোটের পক্ষে কাজ করেছেন।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, আলোচনার টেবিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও কারাগারে থাকার ইস্যুও রয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৯৯ আসনের বিএনপি প্রার্থীদেরকে ঢাকায় ডেকে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত নারায়ণগঞ্জের ৫ প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জান, নজরুল ইসলাম আজাদ, আজহারুল ইসলাম মান্নান, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী ও এস এম আকরামও ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রার্থীদেরকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। গুলসানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাশীন মহাজোট সরকারের বিশাল জয়ের পর ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখারও আলোচনা চলছে। অবশ্য এ ব্যাপারে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক জিয়ার পরামর্শ গ্রহণ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আমাদের প্রথম কাজ এখন বেগম খালেদা জিয়া সহ নেতাকর্মীদের জামিন ও কারামুক্তি। এরপর দল গোছানো ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয়ে নজর দিতে হবে। তবে সবকিছুই হবে বাস্তবতার নিরিখে। বিএনপির সামনে বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতার নিরিখে বিএনপিকে সামনের পথ চলতে হবে। ভোটে কি হয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করার কিছু নেই। কমবেশী সবারই এ বিষয়টি জানা। তারা এ নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করেছে। তারা আরও মনে করেন, বিএনপিকে এখন রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অনিয়ম, সরকারের দূর্নীতি, দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরতে হবে।
আবার অনেকেই মনে করেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন বর্জন আর বিরোধী দল ছাড়াই সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান- দুটো নিয়েই বেশ আলোচনা হয়েছিলো রাজনৈতিক মহলে।
তবে এবার সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির হওয়ার পর এখন দলটির নেতাকর্মী কি করবে এমন হাজারো প্রশ্ন রয়েছে জনগণের মনে।